মনিষীদের জিবনের গল্পের এই পর্বে বিখ্যাত চার্লি চ্যাপলিন।
আজ এক অসাধ্য সাধনকারী ব্যাক্তির জিবনী নিয়ে লিখতে চলেছি। যিনি মানুষের আনন্দের ক্ষুধা মিটিয়ে
জিবনটাই আনন্দে আনন্দের ভরিয়ে দিতেন। তিনি ছিলেন হাসির রাজা স্যার চার্লি চ্যাপলিন। যার নাম শুনলেই বিশ্বজুড়ে সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি হাস্যকৌতুকপূর্ণ মুখের ছবি।যাকে দেখামাত্রই শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবাই এমনিতেই হাসিতে আপ্লুত হয়ে ওঠত।
চার্লি চ্যাপলিনের আসল নাম ছিলো চার্লস স্পেনসার। চ্যাপলিনের পিতার নামও ছিলো চার্লস চ্যাপলিন। মায়ের নাম ছিল লিলি হার্নি। জন্ম ১৮৮৯ সালে ৬ই এপ্রিল ইংল্যান্ডে। পিতা মাতা দুজনেই ছিলেন অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। মা লিলি হার্নি গান গানতেন আর নাচতেন বিভিন্ন নাটকের মঞ্চে। আর চার্লস বাদ্য বাজাতেন আর মাঝে মধ্যে অভিনয় করতেন। লিলি হার্নির েএবার বিয়ে হয়েছিল জনৈক বড়লোকের সাথে । কিন্তু এ বিয়ে টেকেনি। যাত্রাদল
থেকেই এক বড়লোকের সাথে ভাব করে বিয়ে বসেছিলেন লিলি। তিন বছর পর এই বিয়ে ভেঙে গেলে লিলি আবার এসে জুটেছিলেন আগের দলে। কখনো চার্লস সে দলেই কাজ করতেন। দুজনের সাথে আগেই পরিচয় ছিল। এবার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হলো। তারপর বিয়ে । আর তাদের সংসারেই জন্ম হলো বিশ্বখ্যাত কৌতুকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের।
স্বামী-স্ত্রী দুজনে যাত্রাদলে নেচে আর গান গেয়ে সামান্য আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চলত না। সবসময় অভাব অনটন লেগেই থাকত। এ ছাড়া চ্যাপলিনের বাবা চার্লসের স্বভাবই ও খুব ভালো ছিল না। ছিলো নেশা করার অভ্যাস। সামান্য যা আয় করতেন তার বেশির ভাগই ব্যায় করতেন নেশা করে। অতঃপর লিলি হার্নির দ্বিতীয় বিয়েও টিকলো না। নেশাখোর স্বামীর সাথে ঘর করা তার পক্ষে সম্ভব হলো না। চার্লির জন্মের কয়েক বছর পরেই তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো। মা লিলি ছেলে চ্যাপলিনকে নিয়েই রয়ে গেলেন যাত্রাদলে। বাবা চলে গেলেন অন্যত্র।
বলতে গেলে মায়ের কাছ থেকে এসেছে তার এই অসাধারণ প্রতিভা। মা যেখানেই যেতেন ছেলে তার সাথে সাথে থাকতেন। মা যতক্ষন স্টেজে গান গাইতেন বা নাচতেন, চ্যাপলিন পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে দেখতেন। সর্বক্ষন নজর থাকত মায়ের উপর।
গল্পটি হলো এমন :কিভাবে অভিনয় শুরু চার্লি চ্যাপলিনের
হঠাৎ একদিন তার মায়ের অনুষ্ঠানে ঘটলো এক অঘটন। সেটা ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের কথা। মা স্টেজে গান গাইতে উঠেছেন। তার শরীরটা দুদিন থেকেই খারাপ ছিলো। পয়সার অভাবে অসুস্থ শরীর নিয়ে গান গাইতে এসেছিলেন। যলে যা হবার তাই হলো। স্টেজে গান গাইতে গাইতেই মায়ের গলার আওয়াজ আর বের হলো না। ওদিতে দর্শকের গ্যালারি থেকে শুরু হলো হই হল্লোড়-চিৎকার। মা নিজের অবস্থা এবং স্টেজের হইচই দেখে আরো ঘাবড়ে গেলেন। পরে ভীত হয়ে পালিয়ে এলেন স্টেজ থেকে। পাশে দাড়িয়ে সব তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে লক্ষ করছিলেন বালক চ্যাপলিন। যখন মা স্টেজ থেকে বের হয়ে এলেন তখনই চ্যাপলিন এক অবাক কান্ড করে বসলেন। তিনি গিয়ে সোজা দাড়ানের স্টেজে দর্শকের সামনে।তারপর ধরলেন গান::
Jack Jones well and
known to everybody
তার চমৎকার গলা শুনে দর্শকরা তো থ বনে গেলা। মুহুর্তে থেমে গেল গোলমাল। এবার দর্শকরা আনন্দে উৎফু্ল্ল হয়ে উঠলো এবং সেই সাথে টাকা আধুলি সামনে এসে ছিটকে পড়তে লাগল স্টেজে। বৃষ্টির মতো। সবাই তার গানে খুশি। তবে এরই মধ্যে আরেক মজার কান্ড করে বসলেন
চ্যাপলিন। যখন দেখলেন বৃষ্টির মতো তার চারপাশে টাকা পয়সা এসে ছিটকে পড়ছে । তিনি গান থামিয়ে দর্শকদের লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন -- আমি েএখন আর গান গাইব না। আগে পয়সা গুলো কুড়িয়ে নিই।
তারপর আবার গাইব। চ্যাপলিন এমন বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে কথাগুলো বললেন যে দর্শকরা একটুও রাগ না করে বরং আরো মজা করে হাসতে লাগলো। এবং আরো টাকা পয়সা পড়তে লাগল।
তারপর আবার গাইব। চ্যাপলিন এমন বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে কথাগুলো বললেন যে দর্শকরা একটুও রাগ না করে বরং আরো মজা করে হাসতে লাগলো। এবং আরো টাকা পয়সা পড়তে লাগল।
টাকা গুলো কুড়িয়ে মায়ের হাতে দিয়ে আবারো গান গাইতে শুরু করলেন চ্যাপলিন।
সেদিন শুধু দর্শকবৃন্দ নয় , মা নিজেও ছেলের প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়ে ভাবছিলেন, হয়তো বা ভবিষ্যতে তার ছেলে বিস্ময়কর কিছু একটা হবে। মায়ের আশা পূর্ণ হয়েছিলো চ্যাপলিনের জীবন প্রতিষ্টায়। চার্লি চ্যাপলিন প্রথম জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন। তার কিশোর- জিবন কাটে মুদি দোকানে , ছাপাখানায়, রাস্তায় কাগজ বেচে, ্ওষুধের দোকানে এবং লোকের বাড়িতে কাজ করে।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে কিস্টোন স্টুডিও তে চ্যাপলিন েএকটি কমেডি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পাই। তবে এখানে তিনি ছিলেন অন্যান্য সাধারণ অভিনেতাদের মধ্যে একজন। তার ভুমিকা সম্পর্কেও তিনি ছিলেন অনিশ্চিত। কিন্তু দ্বিতীয় ছবি ‘কিউ আটোরেসেস অ্যাট ভেনিস’
ছবিতে অভিনয় করিই চার্লি চ্যাপলিন তার নিজস্ব ভঙ্গি প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। এই সব ছবিতে আরো বেশি বিনোদন আনতে তিনি লাগিয়েছিলেন নকল গোঁফ। এবাভেই তৈরি হয় ‘লিটল ট্রাম্প’। এর পর থেকে তাকে আর কখনো পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি। একের পর এক চলচিত্র, অভিনয় আসতেই থাকে তার কাছে।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপ ভ্রমণকালে তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পারমিট বাতিল করা হয়। অবশ্য তিনি কখনো যুক্তরাষ্টের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি। আর এই মর্মবেদনা নিয়ে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সেখানেই তার বাদবাকি জীবন কাটে সর্বশেষ স্ত্রী উনার সাথে। উনা ছিলেন নোবেল বিজয়ী নাট্যকর ইউজীন ও নীলের মেয়ে। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে চার্লি চ্যাপলিনের আত্মকথা ‘My
Autobiography’ প্রকাশিত হয়। সে সময় তার এই বই সর্বকালের বেস্টসেলার হিসেবে বিক্তি হয়।
সুইজারল্যান্ডেই অবশেষে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের প্রিয় অভিনেতা হাসির সম্রাট চার্লি চ্যাপলিন প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।
0 Comments:
Post a Comment